Saturday, May 21, 2016
আজ একজন তরুণ যদি কবিতা লেখেন, তাঁকে সমবয়সী বন্ধু হিসেবে আমার পরামর্শ দিতে ইচ্ছে করে- বাংলা কবিতার ইতিহাসটা আপনাকে জানতেই হবে। এটা পান্ডিত্যের জন্য নয়। যে ক্ষেত্রটায় আপনি কাজ করতে নেমেছেন, তার সার এবং অসারটা আপনাকে বুঝে নিতেই হবে। আপনি অরণ্যে মধু সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন- মৌচাকটা পেলেই হবে, কোথায় বাঘ কোথায় অজগর আর কোথায় হরিণ সে খবরে আপনার দরকার নেই, এই কি মনোভাব? তাহলে আপনি শখের কোবি। কবিতা আপনার সর্বস্ব নয়। কবিতা যেদিন আপনাকে প্রথম কাঁদাবে, আপনি সেদিনই তাকে ছেড়ে চলে যাবেন।
আপনার কবিতায় ভারতচন্দ্র, রামপ্রসাদ, মাইকেল, রবিবাবু, জীবনবাবু, সুনীলবাবু, শক্তিবাবু থেকে আরম্ভ করে আজকের কবিতার সব লক্ষণগুলোর সারাৎসার আমরা পেতে চাইব। আপনি আপনার আঙ্গিক বেছে নিন, অথবা আঙ্গিকই আপনাকে বেছে নিক- কিন্তু বাজার যেন দুটোর কোনোটাকেই নিয়ন্ত্রণ না করে।
আপনার কবিতায় যেমন আবহমান পয়ার আমরা পেতে চাইব, যেমন চাইব অলঙ্কার শাস্ত্রের নিপুণ প্রয়োগ, ঠিক তেমনই হাংরিদের তছনছ করে দেওয়া প্রতিবাদ, এবং শ্রুতিদের উত্তরাধিকার। আপনার কবিতায় ভুসুকুপাদের পাশেই দেখা দেবে রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরীর গুণ, রায়গুণাকরের পাশেই আমরা মিলিয়ে নিতে পারব স্বদেশ সেনের উত্তরাধিকার, গগণ হরকরার পাশেই বিনয় মজুমদার। আপনি ছন্দকে দর্পণ হিসেবে ব্যবহার করবেন, মাথা মিলিয়ে মিলিয়ে দর্পের সামগ্রী হিসেবে নয়। আপনি কবিতার অন্তরঙ্গ আর বহিরঙ্গকে এমন মেলাবেন যে অযোগ্য পাঠক আপনার পোশাক দেখেই ফিরে যাবে, তার অধিকার হবে না আপনার শরীর দেখার, আর আত্মায় উঁকি দিলে তার মৃত্যু অনিবার্য- তারপর সে বেঁচে যদি ওঠে, নতুন দীক্ষায় উঠবে। আপনি যদি আজও স্বদেশ সেনের কবিতা না পড়ে থাকেন, না পড়ে থাকেন রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরী বা বিনয় মজুমদারের শেষ পর্বের কবিতাগুলো... আপনি কবিতা কেন লিখছেন? বরং হাওড়া ব্রিজের মাথায় চড়ে চীৎকার করুন, অনেক বেশি লোক শুনতে পাবে, খবরের কাগজে নাম বেরোবে, আপনি ২৪ ঘন্টার জন্য বিখ্যাত হয়ে যাবেন।
পৃথিবীর কবিতায় অমর হয়ে আছে ত্রিস্তান জারার ডাডাইজম। আর বাংলা কবিতায় অক্ষয় শিকড় গেড়ে আছে দাদাইজম। বাংলা কবিতায় যে কোনো কীর্তিই দাদার কীর্তি। দাদাপুজো করে এখানে লেখার শুভারম্ভ করতে হয়। যে কোবিদাদা তিরিশ বছর লিখছেন, তিনি দশ বছর লেখা দাদার উপরে যান। যদি দশ বছর লেখা দাদা কোনো সিরিয়াস প্রবন্ধ লেখেন, তিরিশ বছর লেখা দাদা বলবেন, ‘হুঃ! এখনই অ্যাত জ্ঞান দিচ্ছে কেন! কাদের দিচ্ছে বলো তো? আমাদের নাকি? আগে তো কুড়ি বছর লিখুক! আমাদের সামনে ও তো খোকা!’ একবার বলা হয়েছিল আমাদের মন্ত্রীরা নাকি দেহত্যাগ করার আগে চেয়ার ত্যাগ করেন না। বামপন্থী দলগুলোয় তো ষাট বছর বয়স হলে তবে বলা হয় খোকা বড় হয়েছে, আর পঁয়ষট্টি বছরে পৌঁছলে তবে তরুণ নেতার খেতাব মেলে। কবিতার ক্ষেত্রেও পাকা চুলের দাম কিছু কম নয়। একটা কথা এঁরা ভুলে যান- কবিতায় তরুণ রক্তই একমাত্র রক্ত। বয়স একজন কবিকে অভিজ্ঞতা নয়, সাবধানতা দ্যায়। অবিশ্যি কাঠিবাজি, গোষ্ঠীবাজির অভিজ্ঞতা এখানে প্রৌঢ় কবিদের অপরিসীম। অ্যাত ছুরি তাঁরা মেরেছেন আর খেয়েছেন যে, একটা রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটে গেলেও বয়স্ক বাঙালি কোবিরা সহজে মরবেন না।
আমি এই পত্রিকাটির পরিচালক। তবু বলছি, এবার একজন লেখককে ধীরে ধীরে পত্রিকামুক্ত হতে হবে। অন্তত উদ্দেশ্যহীন পত্রিকাগুলো থেকে মুক্ত তো হতেই হবে। সেসব পত্রিকা আজ ফেলে আসা শতাব্দীগুলো থেকে উঁকি দিয়ে দেখবে তাঁকে। সম্পাদকদের এটাই শেষ প্রজন্ম, যাদের আমরা জ্যান্ত দেখতে পাচ্ছি। নাহলে আন্তর্জাল এসে কোনো লাভ হয়নি বুঝতে হবে। এরপর একজন লেখক আত্মপ্রতিষ্ঠ হবেন। নিজের ব্লগের মাধ্যমে। নিজের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। এখন সেই পত্রিকাতেই লেখা উচিত যে পত্রিকার সম্পাদকের সহযোদ্ধা হয়ে লেখকের একটা আনন্দ আছে, যে পত্রিকায় লিখতে পারলে লেখকের একটু গর্ব হয় মনে। নাহলে লেখাটা আর যুদ্ধ থাকে না, খেলাও থাকে না... ধান্দা হয়ে যায়, নাম কামানোর ধান্দা। আমাদের দেশে নাম কিন্তু যশ নয়।
পরিশেষে জানাই, আমাদের পরিকল্পনা ছিল এবার কবি সজল বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশের। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই কাজ সম্পূর্ণ হল না। আগামী সংখ্যায় আমরা সেটি প্রকাশ করব।
অনুপম মুখোপাধ্যায়
পরিচালক বাক্
ক্রস স্টিচ
৯
বালিশ। ঘুমন্ত জল। ও বিকেল
আমাকে থামাও। কিছু একটা
পড়ে যাওয়া। জিঘাংসায় মিশে
প্রেম। মোটিফের আলোয় আ-ঢাকা
খাবারের খুনি গন্ধ। ক্যানভাসে গড়িয়ে
যাচ্ছে স্থাবর-জঙ্গম। কালো ঘোড়া। লাভা।
গরদ, গরদ ভেঙে, পুজো ভেঙে
ছুটে যাচ্ছি আমি। আমাকে থামাও। ও বিকেল
১০
বিকেল যদিও এল। ভোলামন, কাকে খোঁজো
ভবনদীজলে? এ বিষণ্ণ চালাঘর। দাঁড়কাকের
অগম্য এ ভেলা। যেখানে তামাকপাতা,
সেখানে তোমাকে খুঁজি আমি। অম্বিকা, অম্বিকা বলে
কারা ওই চলে যাচ্ছে বন্দরের দিকে। জবরদস্তির শেষ
দেখে যাব বলে, ব্রিজের ওপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে
দেব তাকে হলুদ গঙ্গায়। ধীরস্থির কেউ আসে।
রাগের স্বপ্নেও তাকে কচ্ছপের মতো চেনা যায়
ভূমিকম্প সিরিজ
মুহূর্ত
কিছু মুহূর্ত তৈরী হয়
এমন সময়ের কাছে হাত পাতা যায়
নির্দ্বিধায়
ফেরিঘাট দূরে
তবু দুলুনি নিয়ে আসে সেই পারানি
ভাসায়
এমন সময়ের কাছে হাত পাতা যায়
নির্দ্বিধায়
ফেরিঘাট দূরে
তবু দুলুনি নিয়ে আসে সেই পারানি
ভাসায়
আসার
কথা ছিল না
অসুস্থতার
ছুতো নিয়ে আসার কথা ছিল না
এসেছে
বলে কিছু ইতস্তত পা ঘষছে
কয়েকটা
বেসামাল মাথা টলছে সাড়ম্বরে
পাপোশের
ওপর শুয়ে থাকা বেড়ালটিও
টের
পেয়েছে এই কাঁপুনি
উপভোগ
ভোগের
সামগ্রী নিয়ে তোলপাড় রাস্তা
একসাথে
জড়িয়েছে খাদ আর ঢেউ
ক্রিভার্সের
কাছে গিয়ে ফিরে দেখা ক্লিভেজ
ধ্বস-ভাবনা
থেকে শীঘ্র পতন
আনুমানিক
টাকার হিসেবে ক্ষয়
টেকটোনিক
প্লেট
দূরে
সরে যাবে বলে উল্লাস!
কাছাকাছি
থাকায় বড় বেশি ক্লেশ!
নড়েচড়ে
বসেছে দুপুর
মাটির
গন্ধ পাচ্ছে টেকটোনিক প্লেট
আফটার শক
আবার ঘাই মারে বুকে!
এক ঝটকায় সামাল সামাল
কত আর গুস্তাগি মেনে নেওয়া যায়
নাচনী – তোর অহং সম্বল
ট্রমা
এখনও কাঁপছে
থরথর এখনও মাটি
এত চাপা পড়া দেহ, শহরের লাশ
এখানে কী বাঁশি বাজে আজকাল
রাধার ছলাতছল?
রাস্তায় বড় ধুলো, টের পাও মৃত মাছি?
আবশ্যিক নৌকায় মেঘ আঁকা নাজানা
নৌকা কতবার ভাসতে ভাসতে চেয়েছে
নকল মেঘ-ছায়ার ছবি ছুঁতে
সরে সরে গ্যাছে ইচ্ছামতোর কাছে
কাছে আসা থেকে আসামি হয়ে থেকেছে
ডুবে না ডুবে। টলে না টলমলে
তার দাঁড় বানাতে চেয়ে
মাশুল রেখেছে
আসন্ন মেঘলার পূর্বাভাসে
আকাশ ছুঁতে ছুঁতে
হেরে যাওয়া
মেঘগুলো দ্যাখে
আর সেই গেল শ্রাবণবারে
মেঘের ছায়াকে একদিন ছোঁয়ায়
ফিরে যায় পুরনো আত্মীয়রা
মেঘের ছায়াকে দুদিন ছোঁয়ায়
বাতিল হয়ে যায় আঞ্চলিক ছুটি গুলো
মেঘের ছায়াকে বারবার ছোঁয়ায়
হারিয়ে যায় একটা করাতের কাজগুলো
মেঘেরা আজও আকাশকে ছোঁয়'নি
ওরা তোমার নৌকাকে কেন নকল ছবি দেবে
তবে তুমি নৌকা থেকে নেমে এসো
চিত্রকর ও মেঘ দুজনেরই ছায়াছবি পাবে
জোছনাবালকের ঘামনাম সত্য হে
মে মাসের ছেলেটি
এপ্রিলের হপ্তাখানেক ঘাম নিয়ে ঘরে ফিরছে। পা ঘষে ঘষে ঘষে পলাশ ঝড়া রাস্তায় ঘাম ছিটকে
ফেলছে । ঘামের জল শুঁকে নিচ্ছে বন্ধ চা দোকানের এঁটো ভাঁড়। যেমন, ও বাড়িতে ছাদ বাঁধলে,
এ বাড়িতে মিস্ত্রির ঘাম ছিটকে আসে। ঘামের চকচক দেখে পেঁচাটি চোখ সরিয়ে রাখে ইঁদুরের বুক থেকে। ছেলেটি আজ বাজিমাত হচ্ছে চাঁদোয়ার
ভুলভাল ছবিতে। এই যে জোছনায় সাদাকালো পৃথিবী।
সেখানে রূপালী দেখছে না ছেলেটি। ওখানে রূপালীকে দেখছে ছেলেটি। ছেলেটি কবেকার শ্রাবণ
থেকে একটা বৃষ্টিভেজা জোছনা চেয়ে ঘর ছেড়েছিল। আজ ঘামেভেজা জোছনায় নতুন করে বাড়ি আসছে। ছেলেটি কুকুরের গায়ে জোছনা দেখে হাসছে। ছেলেটি বড়ো বাড়িটির গায়ে জোছনা দেখে রাগছে। ছেলেটি অজস্র লোহার বালাপরা পাগলের একপাশে
জোছনা দেখে কাঁদছে। ছেলেটি বন্ধ হয়ে যাওয়া
বাবার ভাঙা দোকানে জোছনা দেখে হারছে। ছেলেটি
চাঁদের গায়ে জোছনা দেখে চাঁদছে। .... আর অনেক
দূরে , তুমি বা আমি বড়ো টেবিল থেকে তিনজনকে হারিয়ে ফেলছি...হারিয়ে ফেলছি...হারিয়ে ফেলছি...
১
কিচ্ছু
হতে নেই এ-জীবনে!
জীবন
নিজেই কিছু নয়।
ইচ্ছে
হয়
তাই
আসি...
শিখায়
শিখায় আমি পোকা খুঁটে খেতে
ভালবাসি
২
অনেক
গাছের নীচে তুমি নেই কোনোদিন
হাওয়া
এসে ঘুরে যায়... আশা করে কিছু...
জল
ভেঙে চুপচাপ উঠে আসে হাঁস
পৃথিবী
বিশ্বাস চায়... একটু বিশ্বাস
কত
গাছ অপেক্ষা করছে
একজীবন
দুইজীবন
এত
বড় শূন্যতায় বেঁচে থাকতে
ভাল্লাগে
না কারো...
যেসব
গাছের নীচে তুমি নেই কোনোদিন
একাই
দাঁড়িয়ে থাকি...
কী
একটু বিশ্বাস... আসতেও পারো...
আসতেও
পারো...
১।
বিছানার ওপর থেকে ফোনের সরে যাওয়ার
একটা তুমি-আমি ব্যাপার আছে। সেদিনের মত মাথার যন্ত্রণাগুলো কোনো কোনো সময়
ঠিক পাড়ার কম্পিটিশনগুলোর পরেই আসে। ঠেকে যায়।
কমে যেতে যেতে 'জল' বলে।
বাবারা বেশিরভাগ সময়ই 'হাঁড়ি ভাঙা' খেলতে এসে কাছাকাছি গিয়ে পড়ে আর ভাই'রা কারও মাথা লক্ষ্য করে লাঠি তুলে ধরে।
তোমার মত কেউ কেউ 'মিউজিক্যাল বল' এ সেকেন্ড বা থার্ড হয়।
রুটি আর ফুলকপির ডিনারে নিমন্ত্রণ করলে
সরু সরু লক্ষ্যগুলোর বিচ্যুতি ঘটে।
এখানে রুমাল আছে ফোন ব্যালান্সও
শুধু দুই আর দুই মিলে চার হলে
কি আমি বলতে পারি
দুই আর চারেও দুই হয়!!
২।
বিশ্বাসঘাতকের একটা বর্ণপরিচয় থাকে
আগে পরে যার সর্ষে বা পুঁইমাচা
অথবা একটু বাঁদিক ঘেঁষে শোয়
আমি কি কখনও তার ডাকনাম হতে পারি
আসন্ন চিঠি প্রাপ্ত হতে হলে
নিয়ামক বা নিরূপক রাশি
থাকতে হবে একটা
মায়া যাকে অমায়িক বলে ধরে নিয়েছিল
আরে, এই চুপ্, চুপ্
নয়, আট, সাত.....তিন দুই
নাউ
মল্লিকা .com
যখন মল্লিকার সমস্ত চৌষট্টি আমি আলতো করেছি
যখন ক্যামেরার অনুরোধ ডালিম ফোঁটায়
আর অনুরণন মানে চুড়ান্ত দেবদারু
যখন ফর্সা হাসি একটা কোমর ছাড়া কিছু নয়
কিছু একটা নয় ১৪৪ সিলিকনের ওপর মাধুরী ছোট্ট একটা ড্রপ
নতুন শতাব্দীর কুঁচকে যাওয়া দশ ইঞ্চি
আমাদের পশম অবধি নিয়ে যায়
যেন খুঁজতে থাকে মনোবীণা, মনোভাব, মন মেঘের ওপর
জার্নি
আর আমি আদরের জামফল একবার বোধ করি।
বুঝতে পারিনা কাকলির জলবায়ু।
যেখানে নিখুঁত পাজামা ব্যাথার ঠুংরিগুলি
মাংসের গান হয়।
আমার মনে পড়ে কুসুম ঊরুর ছাদ।
শ্বাস প্রশ্বাসের কার্নিশে আত্মীয়তা শিখি।
আমি কেউ নই, কম্পনরত চাপ তখন ভীতু ও গরম।
চিরুনী কামনাদেবী আর লাল টিপ বালির ওপর
তুখোড় প্রেমিক তবু ঈষৎ আলসেমি।
আমায় যে কোনো একটা বইয়ের রিভিউ করতে বলা
হয়েছিলো। তা কোন বইয়ের রিভিউ করবো এই ভেবে
যে বইটা সেই সময় পড়ছিলাম সেটারই রিভিউ করতে
বসে পড়লাম। আমি আগে কখনো কোনো বইয়ের আক্ষরিক রিভিউ করিনি। বইটা আগে থেকেই পড়ছিলাম।
রিভিউ করার জন্য নতুন করে পড়তে শুরু করা মাত্র মনে হলো রিভিউ কী? কাকে বলে? এই সব।
তারপর যতো এগোলাম প্রতিটা পাতা আমায় যা কিছু দিলো লিখে ফেললাম। জানিনা এটা কতোটা
রিভিউ হলো। তবে আমার মনে হওয়া হলো বটে।
‘হুডিনির তাঁবু’ থেকে প্রকাশিত বইটির কোনো নাম
নেই। বইয়ের মলাটে একটা গাছ, একটা চেয়ার, কিছু পাহাড়, লাল সূর্য আর দুটো নাম ‘দেবী।
চান্দ্রেয়ী।’
এরপর
আমার মনে হওয়া
ওঁ যৌথতা ওঁ যৌথতা ওঁ যৌথতা
হলদে
মলাট যেন সবজে গাছের মতো, কালো কালো ডালে কাক বসে, চিল থাকে, খোলসে খোলসে ভরে ওঠে
চেয়ার
একটা
শূন্য চেয়ার গাছের ছায়ায় বাড়ে, হাতল দুটো যেন এই ডানা হয়ে গেলো,পাহাড়ের মাঝে ভেসে
থাকে লাল টুক টুক ওই।
লাল
টুকটুকের ডাকনাম সূর্য দিয়েছিলো মেয়েটি, তার আলুথালু চুল,চুলের ফাঁক নেই কোনো।
সমস্ত জটারা দেওয়াল তুলে দিয়েছে চুলের ভেতর।
সবজে
পাতা যে ধূ ধূ মাঠে মলাট পড়িয়ে গেলো, এই মাত্র একটা একা চেয়ার এসে বাসা বেঁধেছে।
তাঁবুর ভেতর থেকে এই বুঝি উঁকি মারবে জোনাকি।
‘যা
কিছু একার, যা কিছু একের, ভেবে নিই সেই সব কিছুই দুজনকে নিয়ে দুজনের জন্য’
একটা অনুভব সূর্যের মতো লাল,
একটা অনুভুতি যেখানে বসত করে দুইটি ভিন্ন শরীর, শরীরের ভিন্নতায় তাদের রকমফের
ঘটলো, নানা খাঁজ, নানা উঁচু নীচু এক হয়ে গেলো একটি বিন্দু ঘেঁষে,আমি দেখতে পাই সেই
একার চেয়ার। শুন্যতা মেখে ফুলে গেছে ওর
সমস্ত বুক, স্তন হয়ে ঝরে পরছে সমস্ত মাঠে।
‘কাটাকুটি খেলায় কোনো হারজিত নেই’
যেই
মুহূর্তে তোমার বোঝা হয়ে গেলো ‘কাটাকুটি খেলায় কোনো হারজিত নেই’ আসলে আমরা যা কিছু খেলি তার সবটাই কাটাকুটি,
ফারাক কেবল লেন্স এর, তোমার আমার মাঝে যে সাঁকো থাকে তার নাম ভিউ, এই ভিউ গা ঘেঁষে
হেঁটে চলে বেড়ায় সমস্ত একার ভিড়ে, যেখানে
সুন্দর কে দেখলে তুমি ভাগ করে নাও নিজের সাথে,
বিয়োগে বিয়োগে যেভাবে যোগ ভরে ওঠে, এক রাশ ভারীতে পূর্ণ হয়ে যায় যুবতীর সমস্ত যৌবন, আর ওই যে ঝরণা যার
পুরোনো জলের ধারায় নিত্য নতুন তৃষ্ণারা
জন্মে জন্মে ওঠে, কখনো মরে যায় প্রাচীন ক্যাক্টাসে, কখনো সম্পুটে দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রাচীন মানুষের পৈতে হয়ে ঝোলে।
নব নব জল গড়ে পড়বে বলে যখন সমস্তরা
অভিমান গোনে, তখনি তার পুরোনো হাতে কি প্রবল এক ভাসমান সমুদ্র গান হয়ে যায়। ঢেঁড়া
ঢেঁড়া সূরে হাহাকার জুড়ায় সবুজ খামের মাঠ,
সুন্দরী ঝরণা ততোদিনে শিশুতে পা রাখে, শিশুর মতো লম্ফ ঝম্পে পৌঁছে যায় মানুষের কোলে,
যেখানে dear M, dear W তারা অবাধ হয়ে থাকে,
যেখানে নব ধারা ফুটিয়ে তোলে চিরতনীর মুখ।
Silence Must
Be Heard
দুটো প্রাচীর, নানা ওটা ঘর
বন্দী দেওয়াল, তবে ওইযে ফাটল? কে বললো ওকে ফাটল? ও যে নিঃশব্দের মুখ, শূন্যতার
নিরাকার প্রাচীর
‘A
bodhisattva who treats even that (insight) as an object of perception, will there by part
from this perception of wisdom (prajna), and get far away from it…’
যার মাঝে একটা অ এর মতো ঠোঁট থ
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর নীল ঘেঁষা কিছু পাখি
পার করছে ইধার উধার। কোনো তীব্র বেশধারী শূন্য গোলাপ যেভাবে পাতা শুকিয়ে রাখে নিজেদের ভেতর ঠিক তারই অমাবস্যা
ঘটলে আমরা একটা নতুন জেনে যাই।
স্বপনচারিনী থেকে,
স্বপ্ন আসলে একটা ঘুম, যখন
ঘুমের ভেতর সকাল হয়, সত্যি সত্যি বলে কাঁসর ঘন্টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাদের দল,
তারা যারা স্বপ্নের মতো সত্যি দেখে, সত্যির মতো একটা সমস্ত স্বপ্ন কে ঘর করে তোলে,
বিছানা পাতে, জীবন নামের বেড কাভারে মুড়ি দিয়ে শীত নেভায়, বাসে উঠে ধড়াস ধড়াস
চিৎকার করে, তার একা থাকে কই? তাদের একা আসলে মেলা হয়ে যায়, বয়সের ভার ঝুড়ির মতো
হাটে বিক্রী করে, অভিজ্ঞতার সালোয়ার জড়ায়। দেখো নিচে ট্রাফিক জ্যাম, এক দুই করে জাল হয়ে উঠছো।
ঘর, ঘরের ভেতর ঘর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান, এই
মাত্র চিঠি পেলাম, চিঠি ভেসে এলো হাওয়ার সাথে। আচ্ছা দরজা জানালা রোদ ঝড় সবাই কি
পূর্বে না হয় পশ্চিমে থাকে? জানালারও তো কখনো জানালা হয়, রোদের ভেতর রোদ ঢুকে যায়…
লাল নীলের মতো
চাল ডাল খেলা করে অনুষ্ঠানে… আর ওই চিঠির হদিশ… ওর ডাকবাক্স মিললে নিশ্চই ও
কে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলো?
একটা কবরের ভেতর উলঙ্গ শরীর,
শরীর যখন লাজুক লতার পা, নাকি দুইটি কবর? ঠিক দুইটি মাত্র কবরে একটা মৃতদেহ, একটা কেদারা
যেখানে আরাম দোলে, যদি মৃতদেহরা দুইভাগ হয়ে যায়, ‘ওঁ যৌথতা ওঁ যৌথতা ওঁ যৌথতা’ আর
কটা, না কয়েক হাজার, না কয়েক সংখ্যক মৃতদেহ এসে জোড়া দেয় তাদের সাথে, দুইখানি কবর
আষ্টেপিষ্টে তাদের আকাশ বাতাস পাহাড় লাল টিপের মতো আচরণ করে আর ওই চারাগাছ খানি
জবাব নেই জবাব নেই বলে দুটি বহুতল যোগ করে দেয় তবে,
‘আমি নিশ্চয় করে বলতে পারিনা যে আমি
নিশয় জানি যৌথতা একটি
কাল্পনিক ব্যাপার’
দুটো পা সবুজ রঙের আলতার
খোজে উঁকি ঝুঁকি মারছে
মাটিতে পড়ে আছে কালকের
বাসি
বিছানায় পড়ে আছে ঘুমন্ত
আসলে আমি কালবৈশাখী দেখি,
ভেবে দেখি অবলম্বন যেভাবে ঘাস
হয়ে যায় আমি সে ভাবে বই… বইয়ে
মাঠ খুঁজি, মাঠে
চেয়ার বসাই,ছেলে
মেয়ে,এক করি, তারপর মধ্যরাত্তিরে
গুটিসুটি
মেরে ভিজে যাই
ওই কাগজ ঘরে, লিখে
যাই আর
লিখে যাই
প্রথমেই বলেছি জানিনা এটা কতটা
রিভিউ। একটা বইয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জরিয়ে পরলে, বইটাকে গায়ে মেখে নিলে যা হয়
আমারও তাই হলো। বাকিটার আর কিছু বাকি পড়ে থাকলো কিনা জানা নেই। বইটি সম্বন্ধীয়
তথ্য নীচে দেওয়া থাকলো।
A work of Chandreyee Dey & Debdutta
Ganguly
Page designed by Somtitha Nandi
Published by Houdinir Tnabu, February 2016
বীজ
ভিতরে কোলাহল এবং সুদর্শন
ভোর দেখিবারে পারে পাখি
ওড়ে বাতাস
মেঘ ভাঙে
ফোঁটা ফোঁটা বীজ তন্তুর খোঁজে
অপেক্ষায় জল
না-গল্পের মন্ডে আজ এমন ইচ্ছা করে
আর ক্রমশ ঘন হয়ে আসে অন্য ভূমির
ছবি
প্রসাধন
স্নানের ভিতরে ছায়া প্রকৃতই।
ডানা।
কিছুটা দুঃখ কষ্ট?
তা-ও আছে।
রৌদ্রে রেখেছে তবে কে!
ঐ আলো?
কীট?
প্রসাধনে জমেছে তুমুল।
রাত্রিও।
সাইকেলে সাইক্লিক।
কিছু বা আর্ত।
ভোর হল।
ভোরের দিকেই
তবু বোঝা গেল
চামচ যথার্থ প্রতিরোধশূন্য
হয়েছে।
খেলা
কোথাও কিছু নেই
তবু এ খেলা
দেখি খোলা
যেন কিছুই হয় নি
যেন বা হচ্ছে না
হবে না কখনো
উড়ন্ত চাকি থেকে জল
আবার স্নান
নিচু হই
যথা আগত
শুনতে পাচ্ছো?
না শুনলেই বা কি!
সেই তো গোল।
করপুটে খেলা করে অনঙ্গ
ভাবি,
এই হল বেশ
বারো হাত বুনন, যাকে আমরা শাড়ি বলে জানি – ১
গাছকে বিয়ে করার পর
তার সাথে বিয়ে দিল গ্রামের লোক
একটা কুলীনের
স্খালন করে পাপ বাড়াচ্ছে নিজেই
চন্দনের ফোঁটা যখন মাঘের শীতে আরও জাঁকিয়ে
বসছে কপালে, তখন হাসিমুখ মিনসে
গোছাচ্ছে বরপণ
হিসাবমতো সেই ঝুটো বেনারসী
পরশু দেখা যাবে
চণ্ডীমণ্ডপে
কালরাত্রির পর
শাড়ি খুব সুখে ঝুলে আছে এখন
জোড় ছাড়ানো
বারো হাত বুনন, যাকে আমরা শাড়ি বলে জানি – ২
পাশা খেলা ছেড়ে ভাগ হচ্ছে দল
এখানে দ্রৌপদী জমানা
অউর চাবি খো গ্যায়া
দল থেকে দিয়ে যাচ্ছে মুড়ি
ক্লাবের বস্ত্র বিতরণ
একটা গোটা সংসার পাবলিক
রেসপন্সের ওপর টিকে আছে বলে...
মোটা কাপড়
পাড় কেটে বানানো আসনে
পৌরহিত্য হচ্ছে
নতুন শাড়ির জমিন
বারো
হাত বুনন, যাকে আমরা শাড়ি বলে জানি – ৩
শিকারীর পর চেনাজানা ফাঁদ
বাঘের খেলায় হাঁপাচ্ছে রিংমাস্টার
চৈতন্য আসার সময়
জলের কুঁজো, ভেঙে যাওয়া কানা
পিপাসা
সেখানে প্রেম প্রেম রোগগ্রস্ত আধার
আরও সমাহিত রূপ
ডুরে পরার পর
একটা আধমোছা টিপ
তাক করে আছে শিকারীকে
স্থির চোখ বাঘিনী, ঘটনাবহুল
যেন আদমখোর হবার আগে আগে
দেশলাই জ্বালানো হচ্ছে জঙ্গলময়
চারসত্যি
১
বুকের ভেতর একটা চেয়ার আছে
কাঠের
তুমি বসলে
সিংহাসন মনে হয়
২
বৃদ্ধ মাষ্টার মশাই
ছানি পরা চোখ
মনে হয় শিশুর টিফিনবক্স
যার টিফিন পড়ে গেছে
৩
স্বপ্ন বলছে বাস্তব মিথ্যা
বাস্তব বলছে স্বপ্ন
মিথ্যা পা দোলাচ্ছে
মায়া মাসির কোলে।
৪
শুকনো একটা গাছ
বিশাল এক মাঠের মাঝখানে
অট্টহাসির মত ...
বাড়ি (১)
বাড়িটা গম্ভীর, দূর থেকে দেখি
গেটের ভেতর বাঁধা একটা গ্রে হাউন্ড
গভীর রাতে ভায়োলিন হয়ে যায় বাড়িটা
রাস্তার পাকুড় গাছের ছায়া আর চাঁদের আলোয়, মনে হয়
শীতের আলোয়ান জড়ানো, একা...ঠাকুর্দা।
বাড়ি (২)
ছোটোখাটো হাসিখুশী
এলোমেলো অযত্নে বেড়ে ওঠা কিছু গাছ
ভাদালি, কুলেখেড়া, থানকুনি যে যার মতন
পাহারাদার ভুলু
পুজোর প্রসাদ পায় চেটে, টুকরো মাংসও
এই বাড়ি বাবার মতন
বাড়ি (৩)
বাড়িটা দেখি নি। ইচ্ছে
হলে আঁকতে পারি তবু।
দোলনা এঁকে ঝুলিয়ে দিই বারান্দায়, ধান ছড়াই
উঠোনে
উড়ে আসে শালিখ চড়াই। কিছু চড়াই ঝগড়ুটে খুব ...কথকীও
ধুলোর ভেতর ডানা মেলে স্নান হয়
একটি অন্ধ কুকুর খুঁজতে থাকে সারা বাড়ি।
কাকে খোঁজে!
আমি অপেক্ষা আঁকতে পারি না...