Saturday, May 21, 2016
(প্রকাশিত
গ্রন্থ- -“বিপন্ন বিস্ময়”, “একজন গ্রাম্য কবি’, “ভালোবাসায়
অভিমানে”, “ঈশ্বরবেদ”, “আরাধ্যা যা সহস্রারে” , “ আরশিটাওয়ার”, “ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে”,
“ জিভ এবং চাল ডাল “ ,”জন্মদিনের কবিতা”, “ তিন আখরের কবিতা”, “মৃত নক্ষত্রের জন্য
গান”, “ অশ্বত্থপাতায় জ্যোৎস্না’, ‘অমল
হাওয়া’, ‘রাইকিশোরী’, ‘ রূপসায়র’, আরাধ্যা যা সহস্রারে’, ‘দৃষ্টিহীন দ্রষ্টা’, ‘মানুষী
রূপের দিকে’ )
অস্বীকারের রাজনীতি বাংলা কবিতায় নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেই চলে
গেলেন কবি সজল বন্দোপাধ্যায় আর কবি অরুণ বসু। এবং যথারীতি ফেসবুকীয় বাঙালী কোবিদের
কাছে হয়ে উঠলেন কয়েক ঘন্টার শহীদ ! ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু এক পংক্তি আর বিলাতি বালভাষিত
রিপ উচ্চারণে আমরা উহাদিগের যথার্থ শয্যা রচিত করিলাম। আপাতত উদ্ধার পেল বাংলা
কবিতা।বাংলা সাহিত্যের রাজকীয় জোব্বার ভেতর পতঙ্গের মত ক্ষুদ্র শীর্ণ বিকলাঙ্গ এই
একটা সময়ে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝেই আমার মনে হয় কি হয় লিখে? না, লেখার মধ্যে দিয়ে আমি
কবির প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির কথা বলছি না কিন্তু কবিতা , সে তো জ্যান্ত, তার
টেকসটা কেবল কল্পনা কেবল অবচেতনা নয় বরং তার ডিসকোর্সে একধরনের মানবিক মন্তাজ
রয়েছে, সেই স্বতন্ত্র ভাববিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জীবনেরই মহাজিজ্ঞাসা –তার
অ্যানথোলজিকাল সংগ্রহ তো দূরস্ত , আমরা কি দু হাতে স্নেহার্দ্র ওই অন্বেষাগুলোর
মাথা মুছিয়ে গা মুছিয়ে দিতে পারি না? অরুণ দাকে নিয়ে ‘বাকে’র কাজ করার সময় একাধিক
বার ফোনে ফোনে কথা হত, অদ্ভুত স্থিতধী মানুষ, বেদ উপনিষদের প্রান্তজগত নিয়ে কত
কিছু যে বলতেন আর শেষমেশ কেন জানি ঠিক এ প্রশ্নটাই করে বসতাম-অরুন দা, লিখে কি হয়? এক গাল হাসি হেসে অরুণ দা “ঐতরেয়” থেকে
বলেছিলেন- “ একলা মানুষ বড়ো নিঃসঙ্গতা বোধে/ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথিবীর রোদে”,
হয়ত কলমটাকেও ওই নিঃসংগতা বোধ থেকে মুক্তি দিতেই আততায়ীর মত কবিতা শেখাই।......বাকের
হারানো কবিতা সাজাতে এসে দেখলুম প্রাতিষ্ঠানিক কৃষ্ণবর্ণে প্রকৃত কবিরা কোথাও যেন
কি অদ্ভুত ভাবে একের পর এক হারিয়ে চলেছে এবং আরও আশ্চর্যভাবে এরা প্রায় সবাই
অগোচরেই যেন এই বিস্মরণের কথা জানতেন আগেভাগেই, তবু তারা সহবাস করে গেছেন কবিতার
সাথে কারন তাঁদের কাছে ছিল না কোনো স্পেস টাইমের ক্ষুধা কেবল তাড়না ছিল স্বাধীন ও
মুক্ত কিছু ভিশনের। আজ ঈশ্বর ত্রিপাঠীর কথা বলতে গিয়ে এতটা গুরুচন্ডালীর কারণ
বাংলা সাহিত্যের হন্তারক আত্মধ্বংসী প্রবাহের বাইরে লিখতে আসা এই মানুষটার জন্যও প্রায়
প্রতিটা শিবিরই খুলে রেখে গেছে আদিগন্ত বিস্মৃতির হিম শীতল দরজা।প্রায় তিন দশক ধরে
কল্পনা মেধার দীর্ঘ বিস্তৃত ঈশ্বরের নিজস্ব কাব্যজগত তাঁর মৃত্যুর পর আজ বাংলা
কবিতার হিমঘরে।
তাঁর যাপনের সাথে সৃষ্টির গভীর অবলোকন ব্যতিত ঈশ্বর ত্রিপাঠীর
সার্বিক মূল্যায়ণ প্রায় অসম্পূর্ণই থেকে যায়। সারাজীবনই ‘এক প্রান্তিক শহরকে
বাসভূমি নির্বাচন করে কাব্যচর্চা করে গেলেন ঈশ্বর ত্রিপাঠী। বাঁকুড়া জেলার মানুষ
ঈশ্বর ত্রিপাঠী, বাঁকুড়া শহরের শতাব্দী প্রাচীন মহাবিদ্যালয়ে অর্থনীতির খ্যাতিমান
শিক্ষক ছিলেন তিনি। অথচ এই শহরে বাস করেও তিনি তাঁর জন্মভূমি সাঁইতড়ার প্রান্তিক
অন্ত্যজ গ্রামীন অধিবৃত্তটাকে কখনই ভুলতে পারেননি, বলা ভালো ভুলতে চাননি আর
আস্তিক্যের যাপনের অসমবিণ্যাসই হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতার ভুবন। প্রান্তজনের আর্তস্বর
নতুন ভাষার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠল ঈশ্বরের কবিতায়। দক্ষিণ রাঢের ভূমিহার মানুষগুলোর
চাপা নাক ছোট চোখ ধ্যাবড়ানো কাজলের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর ত্রিপাঠীর প্রথম শিল্পসত্য
খুঁজে ফেরা। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন- “ আমার সকল প্রেম/ বাউরী মাহাতো টূডু
হাঁসদা হেমরম/ বাঁকুড়া ও পুরুল্যার ছোটনাগপুরের/ পদবীগুলির সঙ্গে,/আমি
ভালোবাসি/শিলপাথরের রং আদমের সহোদর ভাই’- তাঁর সৃজনভাবনার পটভূমিটাই এই লালমাটির
রাঢ় বাংলা। কিন্তু কবি কখনই স্থির নন , তাঁকে জীবন প্রবেশ করায় নতুন জীবনে, শব্দের
মধ্যে প্রাণের অস্তিত্বকে ছুঁতে ছুঁতেই তিনি বেড়িয়ে পড়েন নতুন অন্বেষনে। ঈশ্বর
ত্রিপাঠীর দীর্ঘ কবিজীবনেও আমরা দেখতে পাই একাধিক দর্শনের মিশেল। যেন কোন অনুশাসন
দিয়ে কোন বিধিনিষেধ দিয়ে শব্দকে বাঁধতে চাননি তিনি, ফলে তাঁর ব্যক্তিচেতনা ধীরে
ধীরে সম্ভাবনার এক মহীরূহ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কবি ঈশ্বর ত্রিপাঠী
সম্পর্কে মানবেন্দু রায় মহাশয়ের কিছু কথন বেশ প্রাসঙ্গিক।–“ পৃথিবীর কোনো প্রান্তে
সহসা একজন কবি জন্মান না। একটি নির্দিষ্ট ভূমিখন্ডে এক অবজ্ঞাত জনগোষ্ঠীর আশা
আকাঙ্খা, ব্যর্থতা –বেদনার পাশাপাশি বেঁচে থেকে জীবনকে ছেনে একজন কবি ক্রমশ হয়ে
ওঠেন। এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াই একজন কবির সাফল্যের দ্যোতক। ব্যক্তিগত অর্জন এবং
সামাজিক সংলগ্নতা এই দুটি ক্রিয়া একজন মহৎ কবিকে সৃজনবেদনার ভাষা যোগান দেয়। বিষয়
এবং ভাষা দুটি বিন্দুই একজন ক্রান্তদর্শীর চলার পথে আলো হয়ে ওঠে। মায়ার জন্ম দেয়।
ঈশ্বরের কবিতার সর্বপ্রধান পরিচয় তিনি আনখশিখর একজন সৎ মগ্নচৈতন্যের কবি। এই
মগ্নতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাঁর স্বভাবকবিত্ব এবং অগ্নিপ্রদাহী জ্বালামুখের মত
তীব্র আবেগশীলতা। যে আবেগশীলতা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে সহসা বিস্ফুরিত হয় এবং বিস্ফোরণের
পর মূর্হুতে নিজস্ব মুদ্রাদোষে নি;সংগ আত্মমগ্নতায় লীন হয়ে পড়ে। বাস্তবিক সমস্ত
স্বভাবকবির সৃজনপ্রক্রিয়া যেনবা জলের মত একে একা ঘুরে ঘুরে আত্মসমাহিত স্বগত
সংলাপ। ঈশ্বর নিজেও এ উদাহরণের বাইরে নন।“-
নিজের ঈশ্বর চেতনার জগত ব্যাখা করতে গিয়ে ঈশ্বর ত্রিপাঠী লিখেছিলেন-
“ আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ। সেই ঈশ্বর আমার ব্যক্তিগত । তিনি অনন্ত বিশ্ব ও ছোটো
মানুষের ছোটোখাটো দুঃখ বেদনা। তিনি মহাপ্রকৃতির পূর্ণতাভিমুখ্য, আবার পতঙ্গের
পতত্রসম্ভূত গুঞ্জরণ।জড়ের মধ্যে লীন হয়ে থাকা চেতনা থেকে গতিময় ব্রহ্মান্ডের
নিরুদ্দিষ্ট আনন্দক্রীড়া। আমার সত্তায় দেশ- ঐতিহ্যের স্রোত নিমজ্জিত অকল্পনীয়
কল্পনা যেমন তিনি, তেমনই পরাবাস্তব ও বাস্তবতার সংমিশ্রণে তাঁর মূর্ত প্রকাশ কেবলমাত্র
মনুষ্যত্বে- বিপন্ন ও বিস্মিত মানুষের জীব-জড় সমন্বিত প্রাণযাপনের ক্লেশ ও
সম্ভোগে।“- সারা জীবন ধরে তাঁর কবিতার ভাষায় বাস্তব ও পরাবাস্তবের দ্যোতনাগুলির
মধ্যে দিয়ে যে নিবিড় দর্শণের চিহ্ন রেখে গেছেন সেখানে কোথাও যেন মানুষ ও নির্সগের
কাছে সামুহিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার । কখনও “রূপসায়রে” ঈশ্বর ত্রিপাঠী আর্থসামাজিক ও
সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদী সমাজের বিপরীতে একটি স্বতন্ত্র স্বর হয়ে উঠে বলেন –“ কখনো
আদরে ঘরে ডেকে নিয়ে গেলে কোন লোক/ বলি, আমি ভুল লোক, ঠিক লোক নই, ভুল লোক/ কবিতা
আমার থেকে দূরে, বহুদূরে।।“ আবার কখনও বা “তেইশে” লেখেন-‘আমাকে ঘুমোতে দেয় না
চাবুকে শব্দ/ নীল শিস-/ সাদা মেঘের ভেলার নিচে/দড়ির মত কালো মানুষ/আমাকে ঘুমোতে
দেয় না/ আমাকে ঘুমোতে দেয় না/হৃদপিন্ড
বরাবর লাথি...”
আত্মজীবনীর খসড়াই যেন তাঁর কবিতা। মানবেন্দু রায়ের ভাষ্য থেকেই বলতে
পারি-“ একটি প্রায় ক্ষয়িষ্ণু শহরের প্রান্তিক গ্রামসমাজ থেকে উঠে আসার পথে ঈশ্বর
ত্রিপাঠীর অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছিল মনস্বিতার আলো। আমাদের সমাজে এই আলোও যথেষ্ট
প্রভান্বিত হয়ে ওঠে না অনটনের তথা দারিদ্রের কারনে। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পথে
ঈশ্বরের বংশ অথবা বিত্ত কোন কৌলীন্যই ছিল না । একমাত্র মেধাসম্পদকে বিকশিত করেই
তাঁকে স্বপ্রতিষ্ঠ হয়ে হয়েছে। দারিদ্র্যের সংসারে তাঁর সেই পাঠমনস্কতাও কোন স্থির
সরলরেখায় স্থিত হতে পারেনি। ফলে মাধ্যমিক পাঠের শেষে, ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই
তাঁকে ভাবতে হয়েছিল সংস্কৃতভাষা পাঠের কথা। এই সংস্কৃত সাহিত্য এবং দর্শনের নিবিড়
পাঠের ফলে একটি স্বতন্ত্রভূমি তাঁর মননজগতে স্থায়ী হয়ে যায়।ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার
জগত এবং সমাজের মানবসম্পর্কের বন্ধন একজন কবির সৃজনবিশ্বকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে।
ঈশ্বর ত্রিপাঠীর কবিতার জগতেও ভারতীয়তা, প্রাচ্যদর্শন এবং মরমীধারা এই ত্রিস্রোতের
বিশ্লিষ্টতা বুঝে নিতে হলে তাঁর ব্যক্তিজীবনের প্রতিভাসগুলিকেই মনে রাখা প্রয়োজন।“-‘পদ্যকথামৃত’,
‘মানুষী রূপের দিকে” কিংবা “ঋক অথবা
শায়েরী’ কাব্যগ্রন্থে একধরনের নিবিড় বির্ণিমান দেখি ঈশ্বরের কবিতায়। তিনি লেখেন –“
এই ঠান্ডা জীবন, জীবনের তলানি/ মাঘ মাসের জল যেন মাটির কলসীতে/ক দিনের বাসি”-কিংবা-“বড়ো
দেরি হল আসতে,বড়ো দেরি/নিজস্ব ঘরের মধ্যে/ঘর চেনা সত্যিই দুরূহ”-প্রাত্যহিক
ক্ষুধার ভাষ্য ছিঁড়ে এভাবেই ঈশ্বরের কবিতা কখনও হয়ে উঠেছে মহাকালের আকর।
যে মানবিক ভাববিশ্বে দাঁড়িয়ে ঈশ্বর
ত্রিপাঠী বলে গেলেন- আমি একজন পঙ্গু মানুষ/ কে গাইছে গান, কে গাইছে গান?/ আমি
তোমার পাশে, আমি তোমাদের পাশে’ সেই ঈশ্বর ত্রিপাঠীই কবি হিসাবে বাংলা সাহিত্যে রয়ে
গেলেন বঞ্চিত, আর তার কারণ অবশ্যই প্রথানুগ প্রাতিষ্ঠানিকতা থেকে চিরকালই ঈশ্বর
ত্রিপাঠী ছিলেন নীরব ,অনীহ। স্থুল প্রগতির সাথে তিনি অন্তঃজীবনের দফা করতে চাননি কখনও
আর তাই মৃত্যুর পরেও কেবল কয়েকটা কাঠের মালিন্যে ঢাকা পড়ে গেল তাঁর কবিতা। আমরা
কোথায় ভাসালাম কবিকে ?...... (রমিত দে)
**********************
কবি
একজন
কবির কাছে করজোড়ে সেবকের মতো
বসে
থাকতে চাই
তিনি তো
সবার থেকে ঈশ্বরের বেশি কাছাকাছি
তিনি তো
সবার থেকে হৃদয়ের অন্তরঙ্গ বেশি
রক্তের
সম্পর্ক শুধু একমাত্রিক
একজন
কবির সঙ্গে আত্মার বন্ধুতা
তবু একজন
কবি আশ্রয়ের জন্য এসে কষ্টে ফিরে যান
তবু একজন
কবি সামান্য সুজনাচার না দেখে ব্যথিত
তবু একজন
কবি আমারই অকল্পিত আঘাতে আহত
তবু একজন
কবি মৃত্যুর যন্ত্রণা পেয়ে
দেখে নেন আমাকে স্তম্ভিত
তুমি
কবি?প্রশ্ন করি আমাকেই আমি
উত্তর তো
নিজে জানি , মানতে পারি না তবু
অন্ধ
অহংকারে
চোর
ঝুপ ঝুপ
বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে একজন মানুষ
সে আমার
মহার্ঘ রতন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে
ভূতের
মতন অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে সে যাচ্ছে বাঁকুড়া স্টেশন।
আমি সেই
লোকটাকে চিনি ;
সে আমার
একান্ত আপন
এককালে
সে আমার বন্ধু ছিল। আমরা দুজন
সেই কালে
কতদিন হেঁটে হেঁটে এরকম বৃষ্টির ভিতর
মেঠোপথে
আলবিল খানাখন্দ জংলা ডাঙ্গা ডিঙিয়ে বিস্তর
মায়ের
স্নেহার্দ্র তিরস্কারে মাথা মুছে ঘুমিয়েছি ঘরে
আমরা
রেখেছি হাত একসংগে তৎকালীন স্বপ্নের ভিতর ।
আমি সেই
লোকটাকে চিনি মাঝে মধ্যে সে এখন আসে
সিঁধেল
চোরের মত লঘু পায়ে- বিন্দুমাত্র জানান দেয় না
অথচ সে
নিয়ে যায় ডাকাতের মত শব্দ তুলে
আমার
অগণ্য প্রতিশ্রুতি, আমার গৌরব অহংকার ।
ঝুপ ঝুপ
বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে একজন মানুষ
সে আমার
মনুষ্যত্ব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে
এবং
চিৎকার করে বলে যাচ্ছে আমাকেই চোর ।
একা
যাক, সব চলে যাক
জ্বলে পুড়ে ছাইও না থাকুক
আমি থাকব এখানেই একা
কারও সঙ্গে বলব না কথা
আমি সেই আদিম মানুষ
সভ্যতা ভব্যতা থেকে লক্ষ কোটি বছর ওপারে
কেবল ইঙ্গিত জানি, ক্ষুধা তৃষ্ণা জৈবিক জীবন
এই ভাষা সে কারণে কবিতার নয়
বোধগম্য নয়, উপাদান-উপচার নয়
যাক সব নিকটে ও দূরে
নাছোড় পাগলকে ছুঁড়ে পচা ডিম, ঢিল
বলুক ন্যায়ের বাক্য সমধর্মী সকলে একদিকে
নতুন কালের পায়রা দশহাতে ওড়াক
আমি থাকব এখানেই
সমষ্টির অবাঞ্চিত একা
আত্মজীবনী
সব
আত্মজীবনীই হাজার মিথ্যায় ভরপুর
কবিও
সেকথা জানে। বোঝে বেশি সকলের থেকে
চোখে তবু
ঘুম নেই।রাত্রি দুপুর
ঝাঁকে
ঝাঁকে মশা । আর মাঝে মধ্যে ব্যথা হয় বুকে
বাঁ হাতে
তা টিপে রাখে। ডান হাতে চালায় কলম
সত্যকাম
হতে চায় । অথচ সে ত্রিভুবন খুঁড়ে
যা পায়
মিথ্যার রাশি । এমন কি শব্দ বেশরম
যে কথা
বলতে গিয়ে ঘেমে যায় –
রাত্রি নেড়ে চেড়ে
বলে, এই
বিষ গাছ । এমন সুন্দর পৃথিবীতে
কেন
মিথ্যে মৃত্যুরূপী এর মূল, কদর্য ছড়াবে !
সমস্ত
প্রকাশ ভুল । এই রাত্রি, শিল্প রাত, জটিল আঁধার
কবির
জীবন লেখা । মানুষেরও
ভালোবাসা শরীরের ডাঙায়
সাঁতার
বাংলা ভাষা
মুখে যা-ই বলি
যতই বাছা বাছা শব্দে
চমকে তুলি স্তব্ধ দিগন্তকে
ভেতরে ভেতরে নিজেই নিজে
ফেঁপে উঠি
বাচ্চার হাতে ঢাউস বেলুনের
মতো
বলি, এই পৃথিবীতে আমার
পাশাপাশি কেউ নেই
যে তোমাকে ভালোবাসতে পারে
এতখানি
তোমার জন্যে তুচ্ছ করে
বেঁচে থাকা
এই আমাদের একটা মাত্র জীবন
আসলে ভালোবাসার ‘ভ’ ও জানি
না আমি
প্রেম তো আরও দূরের লবণ-জল
নিজের পাতালে তাকালে বুঝি
আমার দেখানেপনা অন্য
সবাইকে কীরকম
বেমক্কা ভাবে ছাড়িয়ে যায়
আসলে তোমাকে ভালোবাসার কথা
বলে
আমি ভোলাতে চাইছি সবদিন
চাইছি তোমার শরীরের আহ্লাদ
দু কান ভর্তি অসংখ্য
হাততালি আওয়াজ
ক্যামেরার জ্বলে ওঠা
সংবাদপত্রের শিরোনাম
মুখে যা-ই বলি
যতই ডাকবাক্সে পাঠাই
প্রেমপত্র
তুমি আমাদের এই গরিব
গুর্বো দেশে
মাঠকুড়ানো রোগা পাতলা কালো
মেয়ে
আমাদের মতো সাহেবসুবো,
বাবুভায়াদের সঙ্গে
কোনো জন্মেই কোনো সম্পর্ক
ছিল না তোমার
আজও নেই ।
তবু আমি এবং আমরা সকলেই
রোজ ভোরবেলা আজান দিচ্ছি
তোমার নামে
ব্রহ্মান্ড সুদ্ধ লোককে
শুনিয়ে শুনিয়ে
ক্রমাগত গেয়ে চলেছি
‘ভালোবাসি, ভালোবাসি’
চাবুক
দৃশ্যেরা
হাত পা বেঁধে চাবকায়। চাবুকের দাগ চামড়া কেটে তৈরী করে
ভাস্কর্য
।
তুমি মার
এড়াতে গাছের কাছে যাও । যাও পাতার সূর্য শোষণ প্রণালী
পাঠশালায়
।
তুমি মার
এড়াতে সঙ্ঘ সঙ্ঘারামে যোগ দাও। মূর্খতার ভাষণ শোনো
তাবৎ
বিষয়ে ।
চাবুক
তবু তোমার পিছু পিছু দৌড়োয় । অরক্ষিত চোখের সাদা অংশে
গাছের
ছায়া চাবুক মারে। মণি থেঁতলে দেয় সবুজের উঁকিঝুঁকি ।
চাবুক পড়তে থাকে তোমার ঠোঁটে। রক্তে মুখ ভরে গেলে
তুমি জিভ
দিয়ে তা
চেটে নাও গলনালীর অভ্যন্তরে । তোমার সমগ্র পচন ও
রেচনতন্ত্র
জ্বলে যায় সেই দূষিত রক্তের বিষে। দৃশ্যেরা হাত পা বেঁধে
চাবকায়।
তুমি জন্ম দিয়েছিলে তাদের। পিতৃঘাতী তারা সারাজীবন
তোমাকে
রেহাই দেবে না আর ।
শহর বাঁকুড়া
মাঝে
মাঝেই বিদায় নেওয়ার কথা ভাবি
আমার সব
ভবিষ্যৎ তো অতীত হয়ে এলো
তোমারই
হাতে –
জিঘাংসা
ছলকে ওঠে কন্ঠস্বরে ।
নিজের
উপর বিরক্ত হয়ে উঠি প্রায়শঃই
অন্ধ
পোকার কাছে আলো
কিছু তো
ছিলনা, নেই- মুগ্ধবিভ্রমের !
মাথায়
রক্ত চড়ে যায় ক্রমশঃ
কী ছিল?
কী আছে ? কী ?
ভাবতে
ভাবতে অসম্ভব প্রতারিত মনে হয়
নিজেকে।
ষোলো
রাস্তাই কবির ঘর । বাড়ীতে রয়েছে পোড়ো বাড়ী
কবি নেই, অন্য লোক, মাঝারি মানের পায়াভারী
ভোর খুব ভালো নয়, সন্ধ্যাবেলা খারাপও নয়
ভালো ও খারাপ মেশা দিনরাত, খুশি খুশি পরমায়ু ক্ষয়
সকালের ছন্দ বাঁধা, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শোয়া
বিকেলে বেড়ানো আর গল্পসল্প, মাসান্তে নির্ভুল মাইনে পাওয়া
তার মাঝে কিছু কাজ, বেশি নয়, কম সে তো বলাই যাবে না
দুরূহ দায়িত্বে ব্রতী, সংগঠক, চোখ বাঁধা বিশ্ব হিতৈষণা
স্বপ্নঘেরে আলো যত অন্ধকার ঢেকে দিতে পারে
প্রায়শঃ সফল তবু মাঝে মধ্যে ব্যর্থ ঘাড় গুঁজে
সে ঘরে ঘুমোয়, সাঁটা দরজায় তখনো ভাঙন
স্বপ্নময় নাম আর দুঃস্বপন, ধুলো ওড়া রাস্তার গর্জন
কবির সর্বস্ব রাস্তা, বিপথে পথিক ওই ওরা
যে ছবি মধ্যমা ভুল প্রতিবিম্ব
কবির
উপরিতল , পোষাক, প্রচ্ছায়া ।
গ্রাম দেবতা
সেইখানে
সব ছিল –কদম, বকুল দিয়ে ঘেরা
এক শান্ত
গৃহস্থালী ;
আকাঙ্খিত
নির্জনতা – ডালে ডালে ঘুঘু ও শালিক
গান
শোনাবার জন্য ।
পন্ডিতেরা
কোলাহল করে এল
যে যার
অভ্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে, কিছু চাইল না ।
মহিলারা
ভক্তি ভরে ছেলে কিংবা নাতনীর কপালে
ধুলাছাপ
এঁকে দিল ,
এঁকে নিল
নিজেরও সিঁথিতে
কেবল
কামনা করে সকলের শারীর কুশল ।
চাষী
চেয়ে গেল বৃষ্টি,
বৃষ্টি
যেন প্রাণপাখী
ঐ সব
গাছগুলি ফাঁদ পেতে ধরেছে পিঞ্জরে ।
সুদের
হিসাব হাতে মহজন চলে গেল
সামান্য
আনত হয়ে শহুরে কায়দায়
দু আঙুলে
মাটি ছুঁয়ে –
কলেজ
পড়ুয়া ছেলে দুটি মজা দেখল,
মজা পেল
ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপে ।
সকলের সব
কিছু দেওয়া নেওয়া শেষ হলে গ্রামের ঠাকুর
শুঁড়ভাঙ্গা
হাতী হয়ে, তিন পায়ে, দুপায়ে বা একপায়ে খাড়া
মাথাভাঙ্গা
ঘোড়া হয়ে, হয়তো বা ল্যাজ নাই, হয়তো বা উর্দ্ধমুখ
আকাশের
দিকে চেয়ে একান্ত আপশোষে,
রাত্রির
নৌকোয় চড়ে চাঁদ এলে বলল সে,
“এইবার
তুমি নাও আমি যা দেওয়ার জন্য
ঐ সব
মূর্খদের আমার প্রাঙ্গণ তলে
যখের
ধনের মত এতকাল আগলে রেখেছি ।“
সেইখানে
সব ছিল, অথচ কি আশ্চর্য দেখ –
দুঃসহ
রোদের তাপ ছায়া, অসহ তৃষ্ণার মধ্যে জল,
অশান্ত
হৃদয়ে শান্তি কেউ চাইল না ।
অভিমন্যু
তারা ছিল মোট সাতজন, তুমি একা
তারা ছিল সব সঙ্ঘশরণ, তুমি একা
তারা ছিল সব গুরুজন, মাননীয়
তাদের পিছনে যে কেউ সে কেউ, স্নেহ-
ভাজনেরা সব, ভাই ও বন্ধু, আর যত আত্মীয়
তারা একযোগে তীর ছুঁড়েছিল, অস্ত্র
যার যত জানা ততটা ভীষন, লক্ষ্য
তুমি একা তুমি, ভেঙেছিলে সেই ব্যুহ
ভেঙেছিলে, আরও ভাঙতে চেয়েছ চক্র
স্বার্থের আর লালসার, আর অন্ধ
যারা নিজেরাই ভাগাভাগি খায় শস্য
যা কিছু ফলায় মেঘ ও রৌদ্র, মাটি খুঁড়ে মানুষেরা
মানুষের শ্রম ঘামের ফসল,প্রাণের মুল্যে পাওয়া
যারা নিজেরাই ভাগ করে নেয়, চলে খানাপিনা, নাচা
তুমি চেয়েছিলে সমবন্টন, বলেছিলে ন্যায়নীতি
তুমি চেয়েছিলে হাভাতের ভাত,হাঘরের শালখুঁটি
তোমার পিছনে অশ্রুনীরব ইতিহাস খোলামুঠি –
একলা তোমাকে, তারা সাতজন, মেরেছে সেদিন,আজও
ওই সমবেত, ওরা সাতজন-দ্রুত নেমে আসে খড়গ
পরাণ সখা
ঘরে ও
বাইরে আঘাতের পর আঘাত এসে পড়ে মাথায়
আমি
তোমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ি
যে তীর
ছুঁড়ল সে জানে না আমি তাকে অসম্ভব ভালোবাসি
যে বিষ
তুলে দিল মুখে সে জানে না আমি তার জন্য কতখানি উদ্বিগ্ন
ওরা
ভালোবাসা টের পায় না বলেই পাথর ছোঁড়ে
আমি
ভাবি, এ তো আমারই ত্রুটি
যতখানি
ভালোবাসা ওরা প্রত্যাশা করে
আমি তার
সামান্য মাত্রই দিতে পারি
আমি জানি
আমাকে না চেনার জন্যই ওরা চক্রান্ত করে
যথেষ্টভাবে
ওদের ভালো চাইতে পারিনি বলেই
ওরা আমার
প্রতি বিদ্বিষ্ট
আমি কী
তোমারও প্রতি ওরকম মাঝে মাঝে আঙুল তুলিনি?
আমি কী
তোমার মূর্তি কখনো কখনো ভেঙে চুরে
অন্য
মেরুর দিকে চলে যেতে বাড়াইনি পা?
তোমাকে
বলিনি খুব উচ্চকন্ঠে চেঁচাতে চেঁচাতে
এই যে
আমার যত জপতপ সব ব্যর্থ হলো
এই যে
আমার নেই চমকে দেওয়ার মত প্রতিভার আলো
এর জন্য
তুমি দায়ী । তোমারই নির্মাণে খুঁত ছিল ।
জেনেও
জানি না আমি এ ভাবেই । ওদের কী দোষ !
আঘাতে
আঘাতে ধ্বস্ত দিনরাত, সারা গা, সর্বাঙ্গে রক্ত ক্ষত
তোমার
পায়ের কাছে মৃতপ্রায় লুটোই প্রত্যহ
বলি,
তুমি ক্ষমা করো, বলি, দোষ নিও না ওদের
আমার তো
তুমি আছ একান্তের
ওদের
একটু বাসা নেই।
চেনা অচেনা
একজন
চেনা মানুষের ভেতর থেকে অন্ততঃ একশো অচেনা
মানুষকে
লাইন দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে
বিস্ময়ে
নিথর হয়ে জাই। প্রশ্ন করতে গিয়ে অনুভব
করি যেন
জিভে লাগানো আছে ফাঁস। এরা কারা? এরা কারা?
আমার
আলোড়ন সৃষ্টিকারী চিৎকার স্বপ্নের ভেতর
ডুবে
জ্যায়, আর আমার সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন
জেসাস ও
জুডাস, নিষ্কাম শ্রীরামকৃষ্ণ ও নির্বাধ যৌনতার
প্রবক্তা
রজনীশ, সিদ্ধার্থ ও শাইলক, হাসি খুশি রামের
পিঠে
গোমড়ামুখো শ্যাম, প্রতিভা ও মূর্খামির চরম,
প্রলেতারিয়েত
এবং বুর্জোয়া- সাদা কালোর অনৈসর্গিক সম্মেলন ।
দেখতে
দেখতে সূর্যমণি ফুলের মত আমার বিজ্ঞান সংশোধিত
চোখও
ঘুরে জ্যায় পুব থেকে পশ্চিম ।
মায়া
অথবা ভোজবাজির অতলে আমি তলিয়ে যেতে
থাকি
নির্বিষণ্ণ । পাহাড়ের চক্ষুকোটর থেকে বেগবতী
অশ্রু
গড়িয়ে পড়ে শুধু । গড়াতে থাকে অভিজ্ঞতা এবং
জন্মের
রহস্য , স্বেদকম্প ও সমাধি
একুশ শতকের কবিতা
কালো
মানুষের হাতে কালোসীসা তুলে দেয় কালো বর্ণমালা
কালো
ধ্বনি কালো ছন্দ কালো শব্দরাশি
বাগর্থের
মত মিশে মিশিয়ে দনুজ ক্রোধ প্রতিহিংসা স্পৃহা
পোষাকী
সাদার চোখে ভেঙে পড়ে ইন্দ্রাস্ত্রের মত
সাদা
সংস্কৃতির থেকে খুলে যায় শক্তির মুখোশ
কালো কবিতার
জন্য এ আমার প্রত্যুদগমন ।
জিভ এবং চালডাল
আমার এমন
একটা মুখ আছে যে মুখে সকলের গায়ে
থুতু ছিটোতে ইচ্ছা
করে
আমার এমন
একটা মুখ আছে যে মুখ সকলের পায়ে
সব সময় ঘষতে ইচ্ছা
করে
প্রকৃতপক্ষে
এই দুমুখো মানুষ আমি দুটো মুখকে নিয়ে
পড়েছি ভয়ংকর বিপাকে
থুতু দিই
না পায়ে ঘষি, পায়ে ঘষি না থুতু দিই
অনেকদিন
ভেবে কোনো কুলকিনারা না পেয়ে
অবশেষে হঠাৎই সিদ্ধান্তে এলাম –
আমি
অবিরত থুতু ছিটোবো ওই গোদরেজ আলমারি
সোফা সেট
ড্রেসিং টেবিল ও ব্যাঙ্কের লকারের গায়ে
এবং সেই
সঙ্গে সঙ্গে সব সময় মুখ ঘষবো
মানুষের
পায়ে , তার পায়ের নখের ডগায় ।
ভিক্ষুকের অভিমানে
যা দেবে
তা নির্বিচারে মাথায় ঠেকিয়ে নিতে বাধ্য আমি ।
আমার তো
ভিক্ষার ঝুলি – সুতরাং চাল
কাঁড়া বা
আঁকাড়া দেখে শুনে নিলে
জীবনযাপন
ছক তিলার্ধও আর কি বদলাবে ?
দেখা
মানে প্রতিবাদ – দেখা মানে অভিমান ক্ষোভ ,
এসব কি
ভিক্ষুকে সাজে ? ভিক্ষুকের লোভ
সর্বদাই
সীমাহীন । অথচ দানের সীমা আছে ,
অথচ
দাতার সামর্থ্য তো সীমাহীন নয় –
যে কোন
তর্কের অধ্যাপক তৎক্ষণাৎ বলে দেবে
‘দান
কথাটাই আপেক্ষিক।“
তবু
ক্ষোভ
তবু পাজী
বেয়াড়া ছেলের অযৌক্তিক জিদ
অন্য
ছেলেদের ভাঁড়ে ঈর্ষাতুর দৃষ্টির ফসল
‘ওকে কেন
দশ পয়সা দিলে, আমাকে দুপয়সা।“
নচ্ছার
বাচ্চার এই জিদ কি বৃদ্ধ ভিক্ষুকের সাজে ?
তাছাড়া
এখন দিলে জীবনযাপন ছক তিলার্ধও আর কি বদলাবে ?
তুমি যা
বলার বল, আমি সার সত্য বুঝে গেছি
শতেক
যোজন দূর থেকে গেছে, থেকে যাবে সন্তান ভিক্ষুকে ।
পদ্য কথামৃত-২৬
কে আসে?
যে
ক্লান্ত ।
কে আসে?
যে একা ।
কে আসে?
যার
পায়ের নখটুকুর জন্যেও
অন্যত্র
জায়গা নেই ।
সকল
মানুষের
সব থেকে
ভেতরের
সেই
মানুষটি
যখন শরীর
ছাড়িয়ে
মন
পর্যন্ত নির্জন
সকল
শ্রমের অবশেষে
সকল
জ্ঞানের অবশেষে
সকল
প্রেমের অবশেষে
কে আসে?
যে
ক্লান্ত, একা
সব
অর্থেই ফতুর ।
ঋক অথবা শায়েরী
আজ আমার
জন্মদিনে তোমাদের জন্য সুবার্তা পাঠাচ্ছি
মেল
ট্রেনের মত জোর কদমে ছুটতে ছুটতে
তোমরা আজ
সূর্যাস্তের সময় একবার চুপচাপ
যে যার
চোখের মণির ভেতর নেমে পড়
দেখ,
সেখানে কোন সূর্যাস্ত নেই, কোন গতি নেই
সূর্যোদয় কিংবা
স্থিতিও নেই
যা আছে
তা শুধুই নিরপেক্ষতা আর নির্বিরোধ
আর নির্বিকার
সীমাশূন্যতা।
********************************
ঋণ স্বীকার - শ্রী
মানবেন্দু রায়/প্রান্তর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
চাবুক, আত্মজীবনী, চেনা অচেনা, জিভ ও চালডাল, ভিক্ষুকের অভিমানে, ঋক ও শায়েরি খুব ভালো লাগলো। বিভাগীয় সম্পাদক রমিত দে'র ধন্যবাদ প্রাপ্য।
ReplyDeleteঈশ্বর ত্রিপাঠী এর বই কিভাবে পেতে পারি?
ReplyDeletePlz contact me - 9434335819
ReplyDeleteOr via mail, dharnikhilesh2012@gmail.com