Saturday, May 21, 2016
স্বপ্নলেখা
যখন সন্ত অগাস্টিন (Saint
Augustine )কে প্রশ্ন
করা হয়েছিল “ধর্ম কি?’’(তুলনা, বকরূপী ধর্মের কাছে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্ন। যুধিষ্ঠির মোট ১২৩টি প্রশ্ন করেছিলেন)।
উত্তরে অগাস্টিন বলেন – “ যদি প্রশ্ন না করো আমি জানি।
যদি জিজ্ঞেস করো,আমি জানি না।(if not asked I know, if
u ask me I know not).
যে ধর্ম নিয়ে মানুষের ধ্যান ধারণা আপেক্ষিক হলেও একটি চুড়ান্ত
বিশ্বাস,যাকে কেন্দ্র করে বেঁচে আছে অনুভবের এক অনন্য পৃথিবী অথচ কল্পনাপ্রসূতও
বটে! যেখানে কিনা লৌকিক এবং অলৌকিকের মধ্যবর্তী এক ভাবনা মানুষকে (যারা প্রবলভাবে
ধর্মবিশ্বাসী) প্রতিনিয়ত পার্থিব জগতে বাঁচতে সাহায্য করে, সেই ধর্ম সম্পর্কে Saint
এর মন্তব্য আমাকে বিষ্মিত করে। শুধু তাই নয় , আমার মনে হয় কবিতা সম্পর্কে উনি
নিজের অজান্তেই নির্ভুল কথা বলছেন।
গভীর অন্ধকারে ঢালু রাস্তায় প্রবল হাওয়ার মধ্যে প্রচুর
পাবার আশা নিয়ে বেরিয়ে অবশেষে নিঃস্ব হয়েই
ফেরার পর আরো কিছু আঁকড়ে ধরার নেশা যখন পেয়ে বসে, যখন ঐ কিছুর পিছুতে কিছুক্ষণ বসে থাকার নীরব গুনগুণ, দিশাহীনভাবে এক
তীব্র জ্বলনে অতিষ্ঠ করে। যখন ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিষাদ, আঘাত, প্রত্যাঘাত এবং নিস্ফলতার ইতি এবং নেতি ঐ
তরঙ্গ উৎসমুখেই টেনে নিয়ে যায় বারবার নিশিডাক দিয়ে! এক ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়
অন্তরমহলে, এর নাম কি কবিতা! ঠিক জানি না। আসলে কবিতার তো তেমন ভাবে ডেফিনিট
ব্যাখ্যা হয় না! এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। একটি অনন্তকে পদ্মপুকুরে বেঁধে রাখা
যায় না। এর পরতে পরতে লেগে থাকা সামুদ্রিক ঘ্রাণ আমাকে উথাল করে। আমি নিরস্ত্র।
মাথায় শুধু সেই স্রোত যা আমাকে দোলন দিয়েছিল মুহূর্তে। সেই একই মঞ্চ, সেই একই দৃশ্যভূমি তথা মরুভূমি। কখনও হালকা কখনও জোরালো আলো বিব্রত করে । কিছু মাতাল
শব্দের সশব্দ চুম্বন। শব্দের সঙ্গে
বন্ধুতা ক্রমে প্রেমে পর্যবসিত হয়। শব্দেই খুনসুটি ,শব্দেই
যৌনতা। আমি আর আমি। শব্দ সহবাস। অন্যকিছু নেই। থাকে না। বহু
পরিচিত সোদাগন্ধ বাক ও নির্বাকের মাঝামাঝি এমন একটি zone এ নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়, যখন মৌন থাকি। তখন শূন্য
থাকি। শব্দেই জড়িয়ে টরিয়ে।
সততার সঙ্গে বলছি, সত্যি কি কবিতা হয় আমার! জানিনা।
সঙ্কটে ও সংশয়ে থাকি। চাপা দীর্ঘশ্বাসে থাকি। যা বিশ্বাস করি তবে তা কেন হয় না, এই
নেতি পুড়িয়ে মারে অনবরত।
কবিতা নিয়ে আমি
মৌলবাদ বিশ্বাস করিনা। নয়ের দশকের শেষদিকে লিখতে আসার কিছু পরে প্রভাত চৌধুরী
বলেছিলেন—“কি কি লিখবেনা সেটা আগে ভেবে নাও”।
সেটা পরে আমি মিলিয়ে দেখেছি, উনি দামি কথাই বলেছিলেন
একজন অগ্রজ হিসেবে। আমি
কবিতায় টোটালিটির কথা ওনার কাছেই প্রথম শুনেছি। পরবর্তীতে
যখন পদ্য সম্পাদনা শুরু করি
তখন হাড়ে হাড়ে বুঝেছি কথাটির গুরুত্ব। সোনার মাছি যেমন
আমার প্রিয় তেমন পুরী সিরিজ এর প্রেমে পড়তেও আমি রাজি। আর সুপর্ণা ছাড়া শীতকাল
অধরাই থেকে যায়। আমার মনে হয় ভুট্টাখেতের সঙ্গে আমি যদি একাত্ম হতে না পারি তবে, আমি
যৌনভাবে অসৎ। কমল চক্রব্রতী এর কাছ থেকে পাওয়া শব্দ চেতনকল্প জন্ম দিয়েছিল বারীন ঘোষালের অতিচেতনার
ধারণার। বারীন দার এধরণের চিন্তাশীল গদ্যের আমিও ভক্ত। কবিতার মানে হয়না, একথা আমি
বা আমার মত কেউ কেউ মানলেও অনেকেইতো বাঁকা হাসেন! তাতে কীই বা এসে যায় কবিতার! ননফাংশনাল
কবিতার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। তবে স্টোরি কবিতাকেও নস্যাৎ
করা যায়না। কারণ কবিতা এমন একটি সৃজন যার কোন শেষ কথা নেই। আমি সেরা, এই
কথা বলবার অধিকার কারো নেই। কবিতার বৈচিত্রই আমার মনে হয় বহমানতাকে আরো বেশি
বিস্তার যোগান দেয় ।
কিছুদিন
আগে এক বিখ্যাত লেখকের একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কথা শুনছিলাম, উনি বলছিলেন
কীভাবে উনি লেখার আগেই পাঠকের কথা ভাবেন। 1. How to live 2.how to
love 3.how to lie 4.how to
die. এইভাবে
ছক কষে নেন। তো ছকে চলা নামীরা যেমন আছেন ,তেমন রয়েছেন ছকবিহীন অণ্বেষক। আসলে সময়টাই ফ্যাক্টর। কে
থাকবে আর কে থাকবে না তা বলবে সময় এবং সময়ের পাঠক। কেউ বলছেন, “ফলের আশা
কোরো না”। কেউ বলেন পরিশ্রম বিফলে যেতে দেব না। আমি কী বিশ্বাস করি সে আমার একান্তের। আমার কাছে যা
অমৃত, অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। আমি কবিতার রামধনু ও বিশালতায় বিশ্বাসী।
কোনটা আমার গ্রহনের তা আমি জানি। তাই বলে যা গ্রহনীয় নয় তা নিশ্চই অনিবার্যভাবে বর্জনের
হতে পারেনা! আমি কবিতায় বিশেষণ এবং উপমার ব্যবহার ততটা প্রয়োগ করতে ভালোবাসি না । কট্টরপন্থীও নই
তাই বলে। আবার শবরীদির যখন একজন বৃদ্ধর
অসহায় মুখ দেখে খাবার পড়ে যাওয়া খালি টিফিনবাক্সের কথা মনে হয়, তখন মুগ্ধ না
হয়ে আর কিচ্ছুটি করার থাকে না।
সেই কোনকালে
রবি ঠাকুর বলে গেছেন, “অনেক কথা যাও বলি কোনো কথা না
বলি”, কিংবা, “মানে কিছুই যায়না বোঝা সেই মানেটাই খাটি” - আহা কী
অপরূপ!!
অন্ধকারহীন হয়ে গেল অন্ধকার – এমন আঁধারই যে খুঁজে মরি! যে
যাই বলুন আমি ওনাতেই বুক চুবিয়ে মরি আজও। নিয়ম ভাঙার কথা হলে আজও আমাদের আক্রমনের
ভয় পেতে হয়। অথচ রবিঠাকুর বলে গেছেন, সেই কোনকালে -
১। খেলাঘর ভেঙে গড় খেলাঘর
২। আমি বাস করি
তোমার ভাঙা
ঐশ্বর্যের ছড়ানো টুকরোর মধ্যে।
কবিতাকে
ফাটিয়ে তার শিরা উপশিরাসহ রক্তরসের নির্যাসকে অনুভবে পৌঁছে দিয়ে দ্যুতিময়
সৃষ্টিকে(গদ্য) রামধনু করে তুলেছেন বারবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অথচ ঘরে ঘরে
বৈঠকখানার চৌহদ্দি পেরিয়ে অন্দরমহলে পৌঁছে গেলেন শরৎবাবু । তাই গলাবাজি করে কিছুই বলা
যায়না সমসময়ে। আমার মনে হয় কবিতার কোন মূলধারা নেই। অ্যান্টিক ঘড়ির পেন্ডুলাম যেন বা! দুই চূড়ান্ত
বিপ্রতীপে সমানতালে দুলে দুলে সময়কে এগিয়ে
নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক সুখের জন্য কষ্ট পেয়ে মরি কেন! যে যার মতো কাজ করলেই হয়।
আলটিমেটলি লিখিয়েরা পাঠকই চায়। কোন কিছু, তা মেটেরিয়াল কিংবা ইম্মেটেরিয়াল উভয়ই
হতে পারে, তেমন কিছু খুব বেশি পেতে পেতে অথবা না পেতে পেতে মানুষ এমন একটি জায়গায় মানসিকভাবে
অবস্থান করে তখন পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে বিন্দুমাত্র ফারাক থাকে না। হিসেব নিকেশ
মিথ্যে হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সে সময়ে উপলব্ধির জায়গা তৈরি হয়। সুন্দর-কুৎসিৎ, সুখ-অসুখ
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। স্থবির হয় মন। কবিতা
লেখা হয়।
কি লিখব না
আমি জানি। কি লিখব আমি জানিনা। আমি এমন একটি শব্দ উৎসের স্বপ্ন দেখি, যা আমাকে
বিচলিত করবে অথচ বিগলিত করবেনা। ঘরে বাইরে সেই কালোটি খুঁজে বেড়াচ্ছি । যার বৈভবে আমি
মুগ্ধ কিংবা শুদ্ধ কোনটিই হবনা। শুধু শব্দহীন থেকে যাব আজীবন। ভিতরে ভিতরে ফেলে আসা জীবনের
মুহূর্তরা ভাষা দেবে কিংবা দেবেনা!রক্তাক্ত হব দুরকম ভাবেই।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
রিমি দে ওঁর কবিতা পড়েছি। এবার কবিতা সংক্রান্ত এই গদ্যখানি কবিকে চেনাজানার ক্ষেত্রে আরও একটুখানি নিকট করে দিলো । ভালো লেগেছে; বলতেই পারি !
ReplyDelete