Saturday, May 21, 2016
ইওসুকে তানাকা-র কবিতা [জাপান]
পাঠ ও
ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
[ইওসুকে
তানাকা-র জন্ম ১৯৬৯-এ। পেশায় মলিকিউলার সেল বায়োলজিস্ট। প্রথম কবিতা
প্রকাশিত হয় ঊনিশ বছর বয়সে, বিখ্যাত ‘ইউরেকা’ পত্রিকায়। এখন অবধি প্রকাশিত কবিতার
বই—দু’টি। ‘এ ডে হোয়েন মাউন্টেন্স আর ভিজ়িবল’ (১৯৯৯) এবং ‘সুইট আল্ট্রামেরিন
ড্রিমস্’ (২০০৮)। ইওসুকে একেবারেই বহুপ্রসবী কবি নন। খুবই কম লেখেন। গত কুড়ি বছরে
লেখা ওঁর কবিতাগুলো শৈলীগত বৈচিত্র্যে, সংবেদনশীলতায় সমৃদ্ধ। এবং যেটা বিশেষ ক’রে
বলার, ওঁর লেখা—জাপানের সাহিত্য ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার সম্পর্কে সচেতন। ফলে, একুশ
শতকের জাপানি কবিতায় ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য ওঁর নাম। কেন এ’ কথা বলছি? একটু
ইতিহাসকে ফিরে দেখা প্রয়োজন সেটা জানার জন্য। তথাকথিত আধুনিক জাপানি কবিতার
শুরুয়াৎ প্রায় ১২০ বছর আগে। এবং তা ছিল প্রথানুগামিতার একটা অ্যান্টিথিসিস। যাকে
ফিক্সড-ফর্ম পোয়েট্রি বলা হয়ে থাকে। আধুনিক কবিতার সূচনাকালের আগে যে
সাহিত্য-উত্তরাধিকার (লিটেরারি লেগ্যাসি) ছিল তাকে অস্বীকারের মধ্যে দিয়েই নিজেকে
চিহ্নিত করেছিল জাপানি আধুনিক কবিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তরকালে সাহিত্যে
বিশেষত কবিতায় লিরিক এবং সঙ্গীতময়তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন জাপানের বহু কবি। বিশেষ
ক’রে যাঁরা সামাজিক (activist) কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তখন
এরকমটাও ভাবা হ’ত যে জাপানি মিলিটারির আগ্রাসী মনোভাবের জন্য কবিতার এই আবেগপ্রবণ
উপাদানও আংশিকভাবে দায়ী! যাই হোক এর ফলে জাপানি কবিতায় অনেক কবিই অনুভূতির
প্রকাশকে একটা সীমিত রেখায় বেঁধে দিলেন। এটা আজও দেখা যায় জাপানি কবিতায়। ইওসুকে
এই কবিকুলের কোনও স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই পড়েন না। টি. এস. এলিয়ট ওঁর
‘ট্র্যাডিশন অ্যান্ড দ্য ইন্ডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট’-এ যে-কথা
বলেছিলেন সেই বিরল গুণাবলীই দেখা যায় ইওসুকের কবিতায়। ওঁর কবিতা একইসঙ্গে পুরনো
এবং নতুন। প্রথানুসারী এবং পরীক্ষামূলক। লিরিক্যাল এবং ক্রিটিক্যাল। একুশ শতকীয়
আঙ্গিকে সহজেই তিনি তাঁকা-র মতো পুরনো প্রথাকে মিশিয়ে দেন নিজের লেখায়। বাক্-এর
এই সংখ্যায় ইওসুকে-র ‘সুইট আল্ট্রামেরিন ড্রিমস্’ বইটি থেকে দু’টি কবিতা বাঙলায়
রূপান্তরের চেষ্টা করলাম।
—অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়]
স্টেশন, বসন্তে
আমার মুখ, বেঁকে কাৎ
হয়ে ছিল, হাওয়ার সামনে
যে হাওয়া পা-কে নিয়ে চলছে বাঁ দিকে, ডান দিকে
মালভূমির ঢাল বেয়ে উঠছি
শুধু ধ’রে আছি নিজেকে
আর সব কিছু পূর্ণ হয়ে উঠছে ভেতরে
এক ভূতল প্রেক্ষাগৃহ স্বপ্নে দেখছি
তার সব দর্শক গিলে ফেলছি আয়তাকার এক মুখে
কপিকল থেকে গজিয়ে উঠছে পালকরাশি
আর ফুলের মতো তারা ছড়িয়ে পড়ছে এই এপ্রিল মাসে
একটা ক্যাফে, এই রাস্তায়
একটা ক্যাফে আশা করছি
এই পাহাড়ের পাথরের ওপর
এক গভীর ঘুম।
অন্ধকারে
কমলালেবুর রস দেদীপ্যমান হয়ে ওঠে
রসের ভেতর থেকে উঠে আসে জেল্লা।
কাছেই বসন্তের স্টেশন।
লেমন
শীত, সকাল
তোমার কথা ভাবতেই
ভেতরে যে কী এক সুমিষ্ট জন্ম নিচ্ছে, তার সামনে অবিচল
থাকা নিরুপায়
সূর্যের আলোগুলো অচেতন। ক্লান্ত।
একটা ছাতা চুরি হয়ে গেল।
আমি তোমার নাম উচ্চারণ করলাম।
এমনিই। এমনিই করলাম।
কেউ শুনে ফেললে লজ্জাই পেতাম। তবুও...
খবরের কাগজগুলো ভ’রে উঠল সুসংবাদে।
জাপানি
সঙ্গীতের একঘেয়ে শো চলছে কোথাও।
গরম
থালায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে কোথাও।
গোলমরিচ।
পুড়ছে।
যেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গোলমরিচ।
যেন
চেষ্টা করছে নিজেদের শরীর বাঁকাতে।
ওদের
সব খেলা শেষ।
এখনও আমি অবিচল দাঁড়াতে পারছি না এই সুমিষ্টতার সামনে।
বুক ঠেলে উঠে গেল তারা।
প্রবল শীতে, একদিন
এই ঠাণ্ডা হাওয়ার কোণাকুণি রাস্তায় বেপথু হয়েছি
লেবু গাছ
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : ইয়াসুহিরো ইওৎসুমোতো
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment